এখানেও দুর্নীতির সাথে আপোস করব না, আগেও করিনি : প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম

এখানেও দুর্নীতির সাথে আপোস করব না, আগেও করিনি : প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম

 

Brand Bazaar

আমি এখানেও দুর্নীতির সাথে আপোস করব না। আগেও দুর্নীতির সঙ্গে কখনোই আপোস করিনি। আপোস করা সম্ভবও নয়। এটি আমাকে প্রধানমন্ত্রী নিজেই শিখিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর একজন সৈনিক হিসেবে দুর্নীতির সাথে কখনোই আপোস করতে পারি না। আগের সেই ধারা এখানেও অব্যাহত থাকবে। ইনু ভাই আছেন, তিনি এখন যেসব চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব দেবেন আমি আশা করি তা যথাযথভাবে পালন করতে পারব। রোববার সচিবালয়ের তথ্য অধিদফতরে হলরুমে সদ্য দায়িত্ব পাওয়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। নতুন দায়িত্ব নিতে আসা উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন।

এখানেও দুর্নীতির সাথে আপোস করব না, আগেও করিনি : প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম
তারানা হালিম বলেন, দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করে যাওয়া কোনো ব্যতিক্রম কিছুই নয়। এটাই স্বাভাবিক। বরং এর বাইরে অন্য কিছুই ব্যতিক্রম। আগের মন্ত্রণালয়ে সততার সঙ্গে কাজ করেছি, অনেকগুলো কাজ করেছি, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পেরেছি তার মূল কারণ হচ্ছে আমি একজন দক্ষ দিক-নির্দেশক পেয়েছি। আর তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই আমাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী করেছেন, এখানে ইনু ভাই আছেন তাকে নিয়ে বিগত মন্ত্রণালয়ের সফলতার ধারাবাহিকতা রক্ষা করে কাজ করব। এখানেও চ্যালেঞ্জ কম নয়।

তিনি বলেন, ভাল কাজ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী যখন যেখানেই দায়িত্ব দেবেন সেখানেই কাজ করব। সততা, দক্ষতার সঙ্গে কাজ করব। আমি কথা কম বলে কাজ বেশি করতে চাই।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আগের মতোই আমার দরজা আপনাদের জন্য খোলা থাকবে। আপনাদের দাবিগুলো ইনু ভাইয়ের কাছ থেকে জেনে নিয়ে তা বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করব।

তিনি বলেন, আমি আগের মন্ত্রণালয়ে থাকতে কিছু সাফল্যের কথা তুলে ধরতে চাই। যেখানে মন্ত্রী ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে এবং যার পরামর্শে সব সময় কাজ করেছি তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়। তাদের নির্দেশনায় দুই বছর প্রায় চার মাসে যে কাজগুলো করেছি তা কম নয়।

Brand Bazaar

তিনি বলেন, মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১৪ কোটি ৭১ লাখে উন্নীতকরণ, টেলিডেনসিটি ৮৬.০৬ শতাংশে উন্নীত, ইন্টারনেট ডেনসিটি ৭৩০.৬২ শতাংশে উন্নীতকরণ। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের চুক্তি সাক্ষর থেকে স্যাটেলাইটের শতভাগ কাজ শেষ হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট পরিচালনার জন্য এরই মধ্যে আমরা কোম্পানি গঠন করেছি।

তিনি বলেন, বেতবুনিয়াতে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের যে গ্রাউন্ড স্টেশন আছে তারও কাজ প্রায় সম্পন্ন। দ্বিতীয় সাবমেরিন ক্যাবলে আমরা যুক্ত হয়েছি। রবি এবং এয়ারটেল একিভূত করার মাধ্যমে বাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক ভারসাম্য তৈরি করেছি। কলড্রপে তা মিনিট ফেরত প্রদান নিশ্চিত করা হয়েছে। অপারেটরদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে একটি নিবিড় কর কাঠামো তৈরি করতে পেরেছি।

তারানা বলেন, বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে স্মার্ট মোবাইল ফোন। মাত্র ৫ মাসে ১১ কোটির বেশি বায়োমেট্রিক ভেরিফিকেশন সম্পন্ন করা ছিল আমার জন্য বিশাল চ্যালেঞ্জ। যা আমরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করতে পেরেছি। সেন্ট্রাল বায়োমেট্রিক মনিটরিং প্লাটফর্ম বিটিআরসিতে স্থাপন করেছি। যেখান থেকে আমরা সহজে বুঝতে পারি, কোন গ্রাহকের নামে কতটি সিম ব্যবহৃত হচ্ছে।

সদ্য দায়িত্ব নেওয়া তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে মোবাইল নম্বর ঠিক রেখে অপারেটর বদলের সুযোগ তৈরিতে কাজ করেছি। আমরা ইতোমধ্যে মাত্র দুই বছর তিন মাসের মধ্যে এর কাজ শুরু করে রীতিমতো অনুমোদন করে নীতিমালা সংশোধন করেছি। অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে আমরা লাইসেন্স প্রদান করেছি। আশা করছি, আগামী এপ্রিলের মধ্যে এই এনএনপি সেবা জনগণের মধ্যে দেওয়া সম্ভব হবে।

তিনি বলেন, আমরা ডাক বিভাগের ২৩টি পয়েন্টে ই-কমার্স চালু করেছি। পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে এজেন্ট ব্যাংকিং চালু করেছি। কিছু দিন আগেও ডাক টাকা নামে একটি সফটওয়ার চালু করেছি। যে সফওয়ারের প্রমোশন অপারেটর আগামী তিন বছরের মধ্যে দেশের যেসব নাগরিক ব্যাংকিং সেবার বাইরে অবস্থান করছেন তাদের আওতায় ব্যাংকিং সেবার সাথে যুক্ত হবেন।

এ ছাড়াও টেলিকম বিধিমালা মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হয়েছে। টেলিটকের রিটেইলার শাখা ৩৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার বৃদ্ধি পেয়ে তা এখন ৫১ হাজারে উন্নীত হয়েছে। টেলিটকের কাস্টমার কেয়ার সেন্টার এখন ৯৭টিতে উন্নীত করা হয়েছে। টেলিটকের নেটওয়ার্ক বৃদ্ধির জন্য বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তারানা।

তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আরেকটি চ্যালেঞ্জ ছিল এ বিভাগের প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকে লোকসান থেকে তুলে আনা এবং তা লাভজনক করে তোলা। মোবাইল নেটওয়ার্কের মান উন্নয়নের জন্য সমস্যা উদঘাটন করে তা সমাধানের জন্য সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।

তিনি বলেন, আমরা ৬৪ হাজার অপটিক্যাল ফাইবার ক্যাবল আমরা স্থাপন করেছি। এ ছাড়া ফোর-জি গাইডলাইন নানা সমস্যা মোবাবেলা করে আবার তা অনুমোদন পেয়েছে এবং তা অর্থমন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেয়ে আগামী ফেব্রুয়ারিতে চালুর সব ধরনের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছি। এডিবি বাস্তবায়নে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ পরপর দু’বার এক নম্বর অবস্থানে ছিল।

তারানা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের জন্য তারিখটি আমি সারপ্রাইজ হিসেবে রেখেছিলাম। তারা আমাদের বলেছিল, আগামী মার্চের ২৭ থেকে ৩১ তারিখের মধ্যে স্যাটেলাইটটি উৎক্ষেপণ করবেন। ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য আমরা কমিটি করেছিলাম। উক্ত কমিটি তাদের কনসাল্ট পেপারস আমাদের কাছে জমাও দিয়েছিল। সেখানে তারা সুপারিশ করেছিল কিভাবে আমরা ইন্টারনেটের দাম কমাতে পারি।

তিনি বলেন, এ ছাড়া টেলিটকের বহুল আকাঙ্খিত ৬০০ কোটি টাকার নেটওয়ার্ক উন্নয়নের জন্য একটি প্রকল্প সর্বশেষ অর্থমন্ত্রণালয় আমাদের পাস করে দিয়েছে। আমার মন্ত্রণালয় রদবদলেরর সাতদিন আগেই অর্থমন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে জেলা পর্যায় ও সকল মহাসড়কে টেলিটকের বুথ থাকবে। টেলিটক কিভাবে উঠে দাঁড়াবে সেই ব্যবস্থা আমরা আল্লাহর রহমতে করে এসেছি।

তিনি বলেন, এপ্রিল মাসের মধ্যে ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের ফসল তোলার সময়। সবাই তখন দেখতে পারবেন শেখ হাসিনার সরকার এ বিভাগে যে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন তা সফলতা দেখতে পারবেন।

মন্ত্রণালয় রদবদলের পর আপনি কিছু গণমাধ্যমে বলেছেন, এটা আমার গায়ে লাগে এটা কেন- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি মন্ত্রণালয় রদবদলের ব্যাপারে এভাবে বলিনি। আমি বলেছি, ওনারা (সাংবাদিক) যখন বলেছেন আগামী যখন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ হবে আপনি থাকবেন না তখন আপনার কেমন লাগবে। তখন আমি এ ধরনের কথা বলেছি। তারা পুরো ঘটনা না লিখে শুধু ওই অংশটুকু লিখে দিয়েছেন।

আপনি আরও পড়তে পারেন

Leave a Comment